কথাঃআবোলতাবোল

ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি

Ami Mishuk | আমি মিশুক কথাঃআবোলতাবোল(ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি)

বর্ষাকাল এলে আমার সবার আগে মনে পড়ে আমাদের সেই ছাগলগুলোর কথা। কেন না,ওই ছাগলগুলোর সূত্রে ছেলেবেলায় আমরা একটা আলাদা বৃষ্টি দেখতে পেতাম। বৃষ্টিটা হঠাৎ আসত এবং এসে ঝমঝম করে  মিনিটখানেক হয়েই থেমে যেত। আমরা বলতাম,ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি।

তখন বাড়ির সামনের জমিটায় ছাগলগুলোকে গোঁজ পুঁতে দিয়ে আসতাম। লম্বা দড়ি নিয়ে বৃত্তাকারে ঘাস খেত ওরা। অঘটন ঘটাত বৃষ্টিটা।। দু’এক ফোঁটা পড়তে না পড়তেই শুরু হয়ে যেত ওদের তুমুল চিৎকার । মা দৌড়ত অথবা আমরা কেউ। গোঁজ তোলার জন্য মুগুরটা থাকত কাছেপিঠেই। ওটা দিয়ে তখন তাড়াতাড়ি গোঁজের একবার এপাশে ঘা একবার ওপাশে ঘা।

কিন্তু ছাগলগুলোকে মাটির দাওয়ায় তোলা হতে না হতেই বৃষ্টি বন্ধ। মেঘ ফেটে সূর্যদেবের পুনরায় উঁকি। বৃষ্টির এরকম রসিকতা কি শুধু একবার? কখনওসখনও ছাগলগুলো নিয়ে দিনে ঘর-বার করা বার পাঁচেকও হয়ে যেত।

বার পাঁচেক হলেও আমাদের কিন্তু বেশ লাগত। অনেকসময় ছাগলতাড়ানো বৃষ্টিটায় আলাদা ‘শেড’ লাগত। জোর কদমে আসার পরিবর্তে বৃষ্টিটা আসত হালকা চালে সঙ্গে সোনালি রোদটাও থাকত। বৃষ্টির মোটা ফোঁটাগুলিও তখন মিহি।

ওই বর্ষণেও ছাগলগুলো কিন্তু ব্যা ব্যা করত। এদিকে আমাদের যার উপর দায়িত্ব সে না ঘরকা না ঘাটকা। বৃষ্টি যদি না  দাঁড়ায়,এই আশায় ওদের তুলে আনতে পারছি না। আবার ওদের ছেড়ে আসতেও ভরসা হচ্ছে না। অগত্যা দোলাচলে পড়া অবস্থায় বাইরেই দাঁড়িয়ে। মাথায় গায়ে বৃষ্টি জমছে গুঁড়ো গ্যঁড় হয়ে। তবে বৃষ্টিতে ভেজার এ-ও তখন এক মোক্ষম সুযোগ।

সে সময়টাও অনেকসময় বৃথা যেত না। কখনও পথে হেলে দেখে তেড়ে যেতাম। কখনও ছুটে ছুটে লাল ভেলভেটের ঘাসপোকা গুনতাম। আবার কখনও আকাশে রামধনু দেখে উল্লাসে চিৎকার করে উঠতাম। ছাগল তাড়ানো বৃষ্টির সৌজন্যে এভাবেই শৈশবের এক একটা দিন তখন হয়ে যেত স্বপ্ন-রঙিন।

ফি বর্ষায় ছাগল তাড়ানো বৃষ্টিটা আজও আসে। কিন্তু কে মাতবে তাতে? বৃষ্টি ভেজার সেই ছেলেবেলাটা  কবেই গিয়েছে। সেই সঙ্গে গিয়েছে ছাগলগুলোও। কোনওটা দিদির পরীক্ষার ফিজ যোগাড় করতে। কোনওটা দাদার কলেজে ভর্তির টাকা। আবার কোনওটা গিয়েছে আমাদের কারও নতুন বুকলিস্টের বই কেনায়। বর্ষায় স্কুল অথবা বাজার যাওয়ার পথে ছাগল তাড়ানো বৃষ্টিটার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে তাই এখন বড় মুশকিলে পড়ে যাই।