Blog
কথাঃ আবোলতাবোল
পড়াশোনায় খারাপ ছেলে হিসাবে তখন আমি রীতিমত বিখ্যাত।ভুগি হীনমন্যতায়ও। অথচ পড়াশোনাতে মনোযোগীও হতে পারি না।সুতরাং সারাদিন বাড়িতে গঞ্জনা। সঙ্গে উপদেশ, নীলুর মত হতে পার না, নীলুকে দেখে শেখো। একই ক্লাশে পড়া নীলু তখন আমার কাছে বিষ্ময়কর এক প্রতিভা। পরীক্ষায় সব বিষয়ে ফুলমার্কস, অথবা ফুলমার্কসের কাছাকাছি পায়। নীলুর কাছে ঘেঁষতেই ভয় পাই। ক্লাস সিক্সের বার্ষিক পরীক্ষায় আমার সিট পড়ল নীলুর পিছনে। পরীক্ষা বলে কথা! এতদিন কাছে ঘেঁষতে না পারার সংকোচ ফেল করার ভয়ে উবে গেল। অঙ্ক পরীক্ষায় তো বারবারই ওকে খোঁচাতে লাগলাম খাতা দেখানোর জন্য। নীলু স্যারকে নালিশ করে আমার সিট বদলে দিল। শুধু তাই নয়। পরীক্ষার পর বাইরে বেরিয়ে আমাকে ডাকল কাছে। তারপর পরীক্ষায় উত্যক্ত করার অপরাধে সোজা গালে বসিয়ে দিল এক থাপ্পড়। থাপ্পড় খেয়েই কিনা জানি না,এরপর আমার পড়াশোনার গ্রাফ ক্রমেই উর্ধ্বমুখী হতে লাগল। আর আশ্চর্যজনকভাবে নীলুর পড়াশোনা, রেজাল্টের গ্রাফ নামতে লাগল নিচে। শুনলাম,বখে গেছে নীলু। এরপর ক্লাশ নাইন। আমি তখন ক্লাশে দুই। আর নীলু দশেরও বাইরে। সেদিন কোথায় যেন নীলু যাবে ওর দিদির সঙ্গে। বসেছিল,আমাদের গ্রাম সংলগ্ন স্টেশনের নিচে,নিমগাছটার তলায়। এগিয়ে গেলাম। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। হঠাৎ নীলু ওর দিদির আড়ালে আমাকে জিজ্ঞেস করল, পাটিগণিতের কোন কোন অঙ্কগুলো ইমপর্টেন্ট রে? আমি উত্তর দেব কী, ওর প্রশ্ন শুনেই চোখ সজল। মনে হল বলি,এ দীনতা তোমায় মানায় না রাজাধিরাজ! ঠিক এমনই অবস্থা হয়েছিল,সহকর্মী এক শ্রদ্ধেয় দাদাকে দেখে। উনি সব বিষয়েই ছিলেন পারঙ্গম। শারীরিকভাবে তখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন,সে অসুস্থতা কিছুটা বোধহয় ছাপ ফেলেছিল তাঁর চিন্তাক্ষমতাতেও। মেয়ে পড়ে ক্লাশ এইটে। আমি এইটের অঙ্ক নিই। তাই সেদিন আমাকেই বাড়িয়ে দিলেন,মেয়ের না করতে পারা একটা অঙ্ক। ইংরেজির শিক্ষক হলেও যে অঙ্ক উনি করতে পারতেন বাঁহাতে,সেটা উনি আমাকে দিচ্ছেন করতে! আমার মনে হল, আবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে নীলু। নীলু বাঁচেনি।মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই মারা গিয়েছিল ব্রেন টিউমারে। তখন শুনেছিলাম,নীলুর অমনোযগিতা কিছুটা নাকি ছিল ওই রোগের কারণেই। বাঁচেননি সহকর্মী দাদাটিও। মৃত্যুর আগে দুই জীবনের এই পরাভব আমার কাছে আজ রয়ে গেছে কষ্টদায়ক স্মৃতি হয়ে।