কথাঃআবোলতাবোল
‘কী’আর ‘কে’ এই দুইয়ের মধ্যে লড়াই নতুন নয়। দু একজন গোঁয়ার লোক থাকেন,যাঁরা কিছুতেই ‘কী’এর পক্ষ ছেড়ে ‘কে’র দিকে যাবেন না। কিন্তু এ সমাজে তাঁরা সংখ্যালঘু। সমাজ সাধারণভাবে ‘কে’র দিকে। যেজন্য আপনি যতই ভাল সাহিত্য বুঝুন,সিনেমা বুঝুন,রাজনীতি বুঝুন সমাজ আগে দেখে নেবে আপনি কে,আপনার স্ট্যাটাস কী,আপনার বাজারদর কেমন। এগুলো জুতসই হলে তবে সমাজের কানের দরজা ফাঁক হবে। দুখীরামের কথা ধরা যাক। দুখীরাম দিনমজুর। তাঁর দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। কিন্তু সেই দুখীরাম একদিন লটারি পেয়ে গেল হঠাৎ। গ্রামের কোনও বিচার সভায় যে দুখীরামের উপস্থিতি কেউ এতদিন নজরও করত না,লটারি পাবার পরে সেখানে হাজির হতে দেখা গেল,তাঁর খাতিরই আলাদা। ‘এ ব্যাপারে দুখীরাম তোমার কী মত?’বিচারসভার কর্তাব্যক্তিরা আলোচনার মাঝখানেই তাকালেন দুখীরামের দিকে। ঠিক উল্টো অবস্থা হয়েছিল অপুর। লীলাদের বাড়ির পার্টিতে গিয়ে গণ্যমান্যদের আলোচনাসভায় যেই অপু  নিজের মত প্রকাশ করতে গেছে, অমনি ‘একজন বাধা দিয়া কহিল-মশায় কি করেন,জানতে পারি কি?’একসময় যখন আমার পরিচয় সবাই জানত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,দেখেছি সাধারণ কথাও অনেক সময় কলকে পেয়ে যেত। স্কুল শিক্ষকের পরিচয়ে এসে দেখছি,সে ক্যারিশমা গেছে। সমাজ শিক্ষকের কথা যত না শোনে,ভুল ধরে তার চাইতে অনেক বেশি।লেখার ক্ষেত্রেও এই কী আর কে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বড় কাগজ অনেকসময় কী দেখে,কে নয়। কিন্তু ছোট কাগজের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ে কে টাই প্রাধান্য পায়। বড় কাগজে মুখ দেখানো থাকলে ছোট কাগজ কী টা আর যাই হোক না পড়ে বাতিল করে না। এ অবশ্য আমার অভিজ্ঞতা, সবার সঙ্গে নাও মিলতে পারে। তবে কী আর কে এই দুইই যখন দেখবার মত,তখন অবশ্য বলার কিছু থাকে না। কিন্তু কী কিছুই নয়,কে দিয়ে বাজিমাত,এ যথেষ্ট পীড়াদায়ক।