কথাঃআবোলতাবোল (সাতেপাঁচে)

কথাঃআবোলতাবোল (সাতেপাঁচে)

Ami Mishuk | আমি মিশুক কথাঃআবোলতাবোল (সাতেপাঁচে)

কথাঃ আবোলতাবোল

সাতেপাঁচে

আজ সকালে একটা সাতেপাঁচে থাকা লোক দেখলাম।  
মুখে এন পঁচানব্বই সেঁটে চিনি কিনতে গিয়েছিলাম। দূরে নয়,পাড়ারই মুদির দোকানে।  গিয়ে মুদির দোকানের কাঠের টেবিলটায় সবে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছি। অমনি কোত্থেকে ছুটে এল ওই  সাতেপাঁচে।
-‘শুধু নিজের সেফটি হলেই হবে! যে ছেলেটা মাল দিচ্ছে,তার কথা ভাববেন না?’
-‘মানে?’
‘মানে এত টেবিলের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছেন কেন? সরে আসুন ফুট খানেক!’
‘সরি সরি’ বলে পিছু হটি। আমি সাতেপাঁচে না থাকা লোক। সাতসকালে এমন একটা সাতেপাঁচেকে পেয়ে মন ভালো হয়ে যায়।
চিনি নিয়ে চলে আসছি,হঠাৎ সাতেপাঁচের গলা শুনি পিছন থেকে। দোকানের কর্মচারির উদ্দেশে।-‘দে সঞ্জু,একটা সিগারেট দে। আজকাল তো আসলেই বিড়ি ধরিয়ে দিস। সাত সকালে তোদের হয়ে ওকালতি করলাম। আজ অন্তত একটা সিগারেট ছাড়।’
মনটা খারাপ হয়ে গেল। একটু আগে ভেবেছিলাম,অটোগ্রাফের খাতা এনে সাতেপাঁচের একটা সই নেব। কিন্তু সে ইচ্ছায় পুরো জল ঢেলে দিল সিগারেট।
আজ হতাশ হয়েছি বটে সাতেপাঁচে থাকা লোক কিন্তু আমি দেখেছি। হ্যাঁ বেশ কয়েকটা। আমি যেহেতু সাতেপাঁচে না থাকা মানুষ,তাই ওই সব লোকের কথা সকালে মনে করলেই আমার চোখে জল এসে যায় । আসলে নিজে ভাল না হতে পারি, ভাল কাউকে দেখলে আমি স্থির থাকতে পারিনা। ভিতরটা কেমন আকুলিবিকুলি করতে থাকে।
তো চিনি কিনে ফেরার পথে এমনই একজনের সঙ্গে দেখা।  তেমন পরিচয় নেই। কিন্তু উনি আমাকে চেনেন। ভোটের সময় দু একবার আমাদের ফ্ল্যাটের দরজার কড়া নেড়েছেন। সেই সুবাদে। 
 আমাকে দেখেই তিনি আজ  বাইক থামালেন। -‘ বাড়ির সবাই সুস্থ তো?’
এই সামান্য প্রশ্ন। তাতেই আমি বিগলিত প্রায়। হাত কচলে বললাম-‘হ্যাঁ দাদা সবাই সুস্থ।-এদিকে কোথায়?’
-‘এই তো সুকান্তপল্লীতে। ত্রাণের কাজে। আমাদের ছেলেরা পৌঁছে গেছে। যাই ভাই। বহু মানুষ কষ্টে আছে । যদি কিছুটা ওদের কাজে লাগতে পারি-‘
বাইক চলতে শুরু করে। সুকান্তপল্লী দু পা হাঁটলেই। নিজে সাতেপাঁচে থাকি না। কিন্তু এতকাছে সাতেপাঁচেদের কাজ চর্মচক্ষে দেখার লোভ কি সামলানো যায়। বাড়ি ফিরতে দেরি হবে একটু। হোক। চিনি কিনতে দেরির কারণ,দোকানে ভিড় ছিল বললেই মিটে যাবে।
সুকান্তপল্লীতে গিয়ে আমি অভিভূত। দাদা স্বহস্তে সমবেত জনতার হাতে ত্রাণের প্যাকেট তুলবেন বলে দাঁড়িয়ে আছেন। কী যে ভালো লাগছে! কিন্তু ত্রাণ তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হতে এত দেরি হচ্ছে কেন?
দেরি হলে চিনি নিয়ে মিথ্যেটা বাড়িতে দাঁড় করাতে পারব তো!
এমন সময় দাদা হাঁক পাড়লেন-‘আর সাংবাদিকের জন্য বসে থেকে লাভ নেই। ছবিগুলো তোরা মোবাইলে তুলে রাখ। সাংবাদিক এলে এগুলোই ওকে দিয়ে দিস। আমি বলে দেব।এর থেকে  ওর যেটা ভালো লাগবে,সেটাই কাগজে দেবে।’ 
 দাদার কথা শুনে টলে গেলাম। ও হরি,ত্রাণটাই মুখ্য নয়? কাগজে ছবি ছাপাটাই আসল উদ্দেশ্য! এ কি তাহলে একুশের ভোটের আগাম প্রচার? 
চিনি নিয়ে দ্রুত ফিরি বাড়িতে। সাতেপাঁচে থাকা লোক একটু আগে একটা পেয়েও পাই নি। আর এখন, একটা পরিচিত সাতেপাঁচে ছোটবেলায় সেই পুজোর পটকার মত দুম ফটাস!
বাড়ি ফিরে রান্নাঘরে চিনি চালান করে আমার পরিচিত এক সাতেপাঁচেকে ফোন করি।-‘হ্যাঁ হ্যাঁ আপনিই হচ্ছেন। আপনার এত নম্বর! ইন্টারভিউতে আপনাকে দু একটা প্রশ্ন করবে। সেসব আপনার না পারার কথা নয়।’
সাতেপাঁচে না থাকলেও  খুব বেশি ঝুঁকি নেই বলে এই সাতেপাঁচে থাকাটার পিছনে আমি অনেকদিন ধরেই লেগে রয়েছি। আজ সাত্যকির কথা শুনে আমি নিশ্চিন্ত। আমি  অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড হচ্ছিই।
কিন্তু ভুল ভাঙে একটু পরেই। আমারই মত সাতেপাঁচে না থাকা এক কলিগ ফোন করে জানায়-‘সাত্যকিরা অনির্বাণের কাছে টাকা খেয়েছে। ওদের বিশ্বাস কোরো না। অনির্বাণই  এইচ এম হচ্ছে।’
আমার কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে সব। সাতেপাঁচে থাকা মানে কি তাহলে ষাটেপ্যাঁচে থাকা!
হয়ত সবসময় নয়। কিন্তু যা দিনকাল ,মনে হয় বেশিরভাগ সময়ই। কারণ সত্যিই যাঁরা সাতেপাঁচে থাকেন তাদের কাজে কোনও শব্দ হয় না। টেরও পায় না কেউ।
মনে পড়ল বিদ্যাসাগরের কথা। যাঁর ডানহাতের দানকাজ অনেকসময় জানতে পারত না বাঁ হাতই।  আর তাঁর সাতেপাঁচে  থাকা? সেসব তো  বহুচর্চিত। 
 এসব ভাবতে ভাবতেই মোবাইলে আলো । হোয়াটস আপে সাতেপাঁচে থাকাদের একটা গ্রুপে রয়েছি। সেখানেই আলো। দেখি,এক সাতেপাঁচে-থাকা একটা কবিতা পোস্ট করেছে। কবিতাটা তাঁকে নিয়েই। তাঁর সমাজসেবা নিয়ে এক অনুরাগী জনের  মধুর এক ছন্দতরঙ্গিনী।
 সাতেপাঁচের কথা অমৃতসমান/অনুরাগী জনে কহে,পড়ে পুণ্যবান। কিন্তু আজ পড়ার আগেই আমার আঙুল খোঁজে ডিলিটের অপশন।