Ami Mishuk | আমি মিশুক কথাঃ আবোলতাবোল (বাঁকা কঞ্চি)

কথাঃআবোলতাবোল

বাঁকা কঞ্চি

সময়টা যদি হয় সকাল দুপুরের মাঝামাঝি আর কালটা যদি হয় গ্রীষ্ম তবে গ্রামের পথে বে্রোনো ছোট  ছেলেটার হাতে একটা বাঁকা কঞ্চি থাকা মানেই তো সে দিগ্বিজয়ী বীর। অন্তত সেরকমই ছিল আমাদের সময়টায়।

তখন মর্নিংস্কুল থেকে বাড়ি ফিরে গরমভাতে উদরপূর্তি আর তার পরেই সটান রাস্তায়। দৌড় দৌড় দৌড়। আর দৌড়ের সঙ্গী অবশ্যই একটা বাঁকা কঞ্চি।

বাঁকা কঞ্চিরও তখন অভাব ছিল না। এখানে বাঁশবন, ওখানে বাঁশবন।

বাঁকা কঞ্চি দিয়ে কখনও বাতাস কাটতাম,কখনও অকারণে রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ের উপর শাসন চালাতাম আবার কখনও বাঁকা কঞ্চিটা শূন্যে তুলে ধরতাম তরবারির কায়দায়। 

সেসময় পুরাণ ইতিহাসের সন তারিখ সব সরিয়ে রেখে কখনও কর্ণ হয়ে যুদ্ধ করতাম ক্লাইভের সঙ্গে, কখনও পৃথ্বীরাজ হয়ে সেলুকসের সঙ্গে। হয়তো বাঁকা কঞ্চিরই মায়াবী পরশ,তাই কল্পনা আর বাস্তবের সীমারেখাটা সে-সময় মুছে যেত অনায়াসে।

পাঁচমুড়ো পাহাড় আর শ্যামলী নদীর তীরে বাস করা দইওয়ালারা বাড়ির সামনে দিয়েই হেঁকে  যেত, ’দই,দই,ভাল দই’। পিপাসার্ত পথিকটি ‘জল পাই কোথায়’ বলে নাকাল হয়ে আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাতেই ঘোরাঘুরি করত। গরিব মুচির জুতো সারানো ভূতেদের দেখা পাওয়া যেত আমাদের চারপাশে। বাড়ির দেবস্থানে সযত্নে রাখা জোড়া খড়ম শ্রীরামের পাদুকা হয়ে আমাদের পুজো পেত।

গুরুজনেরা ধমক দিতেন-‘কী এক খেলা হয়েছে কঞ্চি নিয়ে! চোখে যখন বিঁধবে বুঝবে মজা।’

গুরুজনদের কথা শুনতে তখন বয়েই গিয়েছে। বাঁকা কঞ্চি হাতেই থাকত শৈশব জুড়ে,কল্পনার বাহন হয়ে।

বাঁকা কঞ্চির সেই বর্ণময় শৈশব এখন শুধুই স্মৃতি।

এখন গ্রীষ্ম আসে,মর্নিং স্কুলও যথারীতি আসে এবং এক বুক নির্জনতা নিয়ে জেগে থাকে বাঁশবনও। কিন্তু  বাঁকা কঞ্চি হাতে নিয়ে গ্রামের রাস্তায় দৌড়য় না কোনও শিশু।

এখন যেদিকে,যখনই চোখ মেলি,দেখি তিনটে কাঠি পুঁতে শুধু ক্রিকেট আর ক্রিকেট। বাঁকা কঞ্চি অনাদরে পড়ে থাকে বাঁশবনের আনাচে কানাচে।

কেবল এক আধ সময় গাছের মগডাল থেকে জাম অথবা লিচু পাড়তে তুলে নিই অনাদরে পড়ে থাকা কোনও কোনওটা। তারপর  কাজ শেষে আবার ওটা  ছুঁড়ে ফেলি যথাস্থানে। তবে কঞ্চিটা ফেলতে গিয়ে কিন্তু টের পাই, মুচড়ে মুচড়ে উঠছে বুক।