গল্পঃঅণুগল্প (হার,জিত)

 

অণুগল্পহার

-স্যার,সব কটা প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিতে হবে কিন্তু।না হলেই-
-ঠিক আছে।
-বেশ বলুন,পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কী?
-দিল্লি।
-ধান থেকে কী পাওয়া যায়?
-আটা।
-সূর্য কোনদিকে ওঠে?
-পশ্চিমে।
-কটা প্রশ্ন হয়েছে স্যার?
-তিনটে।
সারা ক্লাস জুড়ে হইহই। কেননা শেষ প্রশ্নের উত্তরটা সঠিক দিয়ে ফেলেছেন।ওটা যে প্রশ্নেরই মধ্যে তা সদানন্দবাবু খেয়াল করেননি।
অতএব হার।
থার্ড পিরিয়ডে সেভেন সি তে কর্মশিক্ষার ক্লাসে মুখোশ দেখাচ্ছে ছেলেরা। হঠাৎ একজনের প্রশ্ন-স্যার,বলুন তো কোন জিনিস রাম পারে,রাবণ পারে না?
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সদানন্দবাবু বলেন-কেন জেতা।রাম জিততে পারে,রাবণ পারে না।
-হল না স্যার। ওসব উত্তর নয়।  উত্তরটা হল,রাম গেঞ্জি পরতে পারে,রাবণ পারে না।
হো হো হাসির রোল।
মানে আবার হার।
পঞ্চম পিরিয়ডে এইট এ তে  থার্ড বেঞ্চ থেকে সাত্যকি শুধোয়-স্যার,কোন জিনিস দেশেবিদেশে ঘুরে বেড়ায়,কিন্তু সে নিজের জায়গা থেকে নড়ে না?
সদানন্দবাবু হাসিমুখে এর উত্তর চান।
সাত্যকি বলে-ডাকটিকিট স্যার,ডাকটিকিট।
এবারেও হার।

পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে এমনি অজস্র হারের আয়োজন। যেজন্য পাখির মত উড়ে উড়ে চলেন সদানন্দবাবু।
আট পিরিয়ডের ঘন্টা পড়ে।
স্কুল শেষ।
কিন্তু স্কুল শেষ মানে তো এবার আবার সেই বখে যাওয়া ছেলের কাহিনি, স্বামী পরিত্যক্তা  মেয়ের গোপন অশ্রু, বৃদ্ধা মায়ের জন্য কিছু না করতে পারার অসহায়তা!
নিভে যাওয়া মুখে সদানন্দবাবু কাঁধে ব্যাগ নেন। এবার হারের দ্বিতীয় ভাগ। জীবনের হার। 

জিত

পঠনপাঠন বন্ধ। তবু স্কুলে আজ শিক্ষকেরা। কারণ  কীসব  অফিসিয়াল কাজ।
হঠাৎ স্টাফরুমের  বাইরে হইচই।
এক দঙ্গল ছাত্র। গায়ে  ফু্টবলের জার্সি।
হেডস্যার বেরোন।
-স্যার আমরা ফাইনালে জিতে গেছি।
-বাঃ বাঃ-খুব ভালো।-এই কে আছ,একশো পিস রসগোল্লা সাইবুরের দোকান থেকে আনাও শিগগির। খেলোয়াড় আর স্টাফদের জন্য।
রসগোল্লা আসে।
চোদ্দজন খেলোয়াড় আর হেডস্যারকে নিয়ে ছত্রিশ জন স্টাফের মধ্যে দুটো করে রসগোল্লা কাগজে মুড়ে বিতরণ করেন চায়ের দিদি।
দূরে নতমুখে দাঁড়িয়ে থাকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আসা তিনটি বাচ্চা সমর্থক।
রসগোল্লা খাবার পর ঘর বারান্দা জুড়ে আওয়াজ ওঠে ঢকঢক। জল খাবার,এবং জয়ের।