গল্পঃ ছোটদের ছোট ছোটগল্প (মিস ইউ কাঠঠোকরা)

 

Ami Mishuk | আমি মিশুক গল্পঃ ছোটদের ছোট ছোটগল্প (মিস ইউ কাঠঠোকরা)

 ছোটদের ছোট ছোটগল্প 

মিস ইউ কাঠঠোকরা

সারাদিন শুধু ঠকঠক আর ঠকঠক। কাঁহাতক সহ্য হয়! চোখের দুপাতা কিছুতেই এক করতে পারছি না। আর আমার চোখের দুপাতা এক না হওয়ায় বাড়ির সবার কী সমস্যা,কী সমস্যা! 

আমাকে নিয়ে সবাই যাকে বলে একেবারে তটস্থ। এই বুঝি খোকা খাট থেকে পড়ে যায়। এই বুঝি বিছানায় গড়াতে গড়াতে  গিয়ে কোনের আলমারিটায় ঠোক্কর খায়। এই বুঝি হাত বাড়িয়ে জলের জগটা উলটে দিয়ে চারপাশ ভিজিয়ে দেয়।

ওদের এরকম ভাবনা অকারণে নয়।সবগুলোই একাধিকবার হয়ে গিয়েছে আমার দ্বারা। এসব কিছু না হতে দেবার একটাই রাস্তা। আমার ঘুম। কিন্তু ঘুমোব কী,সারাদিন শুধু জানলার পাশের তালগাছে ঠকঠক আর ঠকঠক।

বাবা বলে-‘কাঠঠোকরাটার এখনও বাসা বানানো হল না? কবে থেকে শুরু করেছে!’

-‘তালগাছটায় খুব সার তো, তাই ঠুকছে কিন্তু ফুটো করতে পারছে না।’ বলে মেজকা।

মা আমার দুধের বোতল পরিষ্কার করতে করতে বলে-‘আমার মনে হয় কাঠঠোকরাটা বুড়ো। তাই ঠুকেই  যাচ্ছে,কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।’

মা,মেজকা কার কথা ঠিক তা কাঠঠোকরাটাই জানে। আমি শুধু শুনে চলি ওর বাসা বানানোর আওয়াজ।

ঘুমের দফারফা হলেও আঈয়াজটা একেক সময় মন্দ লাগে না। অনেকসময় দুধ খেতে ইচ্ছে না হলে ওই আওয়াজ শুনতে শুনতেই আমি খেয়ে ফেলি। কাঁদার কারণ ঘটলেও কাঁদি না।

আমি এখনও কথা বলতে শিখিনি। শুধু নানারকম আওয়াজ করি। কেউ সেসব বোঝে না। সবাই শুধু এটা বোঝে,দিনের বেলায় আমার ঘুম আসছে না কাঠঠোকরাটার জন্য।

আমি কবে হাঁটতে শিখব কেজানে! তবে হাঁটতে শিখলেই আমি কিন্তু দেখে আসব কাঠঠোকরাটাকে। নীচ থেকে উপরে তাকালে কি দেখা যাবে না? নিশ্চয় যাবে।  

সেদিন বিছানায় শুয়েই টের পেলাম,একটা ছেলেকে ডেকে আনা হয়েছে বাড়িতে। ওকে ঘিরে সবার কথাবার্তার আওয়াজও কানে এল।

–কী রে পারবি তো লবাই?’বাবার গলা।

-‘পারব না কেন? তালগাছে ওঠা আবার কোনও ব্যাপার! দেখুন না কী করি কাঠঠোকরাটাকে!’

মার তাড়াতাড়ি জবাব-‘না,না মারতে টারতে যাস না। শুধু হুই হাই করে তাড়িয়ে দিস। তাহলেই হবে।’

ছোটকা আজ কলেজ যায়নি। দাঁড়িয়েছিল আমার বিছানার পাশেই। 

ছো্টকা এখান থেকেই বলে–‘তোমরা  ভেবেছ,লবাই তালগাছটায় উঠবে আর কাঠঠোকরাটাও ওখানে বসে থাকবে? লবাই ওর টিকিটাও ছুঁতে পারবে না। তবে লবাই একটা কাজ করতে পারিস। নীচ থেকে কয়েকটা পাথর নিয়ে যদি ওর বাসাটার মধ্যে গুঁজে দিস তো ব্যাটা এই তালগাছ ছেড়ে পালাবে।’

এরপর লবাই কী করে কে জানে। ঠকঠক শব্দটা পরদিন থেকে একেবারে উধাও। বাড়ির সবার মনে স্বস্তি। আমিও দিনে ঘুমোচ্ছি বেশ।

তবে আমাকে নিয়ে বাড়ির লোকের অন্য সমস্যা শুরু হয়েছে। আমি দুধ খেতে চাইছি না। আর যখন তখন কেঁদে উঠছি।

-‘মনে হচ্ছে,ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে খোকাকে।’ বাবার গলায় উদ্বেগ।

ঘুম না আসার কারণটা বাড়ির সবাই ঠিক ধরেছিল। এবারের উপসর্গের কারণ কেউই ধরতে পারেনি। হ্যাঁ,এবারেও কারণ ওই কাঠঠোকরা। আমার সামনে ছোটকা কাকে যেন ফোনে বলে,’আই মিস ইউ।’  

ছোটকার ভাষা ধার করে আমিও বলি-‘আই মিস ইউ কাঠঠোকরা!’