ক্যাডবেরি
(আজ কাজিন ডে। একটা গল্প। ছোটদের) ক্যাডবেরি এই পৃথিবীতে ঋতমের একটাই শত্রু। বাদল। বাদলকে দেখলেই ঋতমের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ওর চোখেমুখে এলোপাথারি ঘুষি চালাতে
(আজ কাজিন ডে। একটা গল্প। ছোটদের) ক্যাডবেরি এই পৃথিবীতে ঋতমের একটাই শত্রু। বাদল। বাদলকে দেখলেই ঋতমের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ওর চোখেমুখে এলোপাথারি ঘুষি চালাতে
আষাঢ়ে গল্প অভিধান বলবে, অদ্ভুত। বলবে, মিথ্যে, অলীক। আমরা বলব, হোক না তা। মাঝে মাঝে এত সত্যির ভিতরে কিছু মজার মিথ্যে না হয় রইলই! দিনটা
অক্ষয়কুমার বড়াল তখন ঘন ঘন বাংলা বই পাল্টাত না স্কুলে। ফলে বইয়ের এক-একটা গল্প কবিতা বা প্রবন্ধ দশকের পর দশক পঠিত হয়ে ঐতিহ্যের মত হয়ে
কবে ফিরবে গতিমার্কা জীবন এনামেলের বাসন কি এখনও কারও বাড়িতে আছে? কিছুদিন আগেও একটা এনামেলের বাসন কিন্তু বেশ যত্ন আর কদর
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ছেলেবেলাতেই। তাঁর কাছেই প্রথম জেনেছিলাম,যে-দেশের তরুলতা সকল দেশের চেয়ে শ্যামল সেই দেশটার নাম বাংলাদেশ। মানে, ‘আমাদেরই বাংলা রে!’ তারপর
উনি এবং ইনি -১৯২১ সালে আমি হরিনাভি স্কুলে। তবে সময়টা তখন সুখের ছিল না মোটেই। বছর দুয়েক আগে গৌরী চলে গেছে। মা-ও গেলেন তোমার এই
সাড়ে ছশো স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাটে হরেক সমস্যা। তার মধ্যে একটা বড় সমস্যা, ছোটদের কাছ থেকে ওদের অনুপযোগী সব কথা আড়াল করা। ছোট জায়গা, না চাইলেও বড়দের কিছু
গান নাটক নিয়েই থাকতে চান ঢাকার নিকসন ঢাকার নিকসন রিজভী একজন স্বশিক্ষিত গায়ক। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের ফিল্ম ও টেলিভিসন মিডিয়ার সঙ্গে নাটকের সহ পরিচালক
গল্প নব পথের পাঁচালী কে মরবে? অপু না দুর্গা? দুর্গা একবার মরেছে,তাই আবার দুর্গার মৃত্যু হোক আমি চাই না। তাহলে কি অপু? হেসে ফেলি নিজের
ছোটদের গল্প পুজোর মালা খবরটা বেশ কয়েকদিন আগেই কানে এসেছিল। কিন্তু তাতে খুব একটা গুরুত্ব দেননি বরদাবাবু। গুরুত্ব দেবেনই বা কেন? বাড়ির গেটের ঠিক
কথাঃ আবোলতাবোল আমার স্কুটি -‘একটা স্কুটি কিনলে কেমন হয়?’ -‘কেমন হয় মানে! বাইক-স্কুটি ছাড়া এযুগে চলে নাকি? রাতবিরেতে কত দরকার পড়ে! বাইক
কথা বাংলাসাহিত্যে ভূত ‘ভূতের গল্প’র শুরুতে উপেন্দ্রকিশোর লিখেছেন, ‘আমি ভূতের গল্প ভালবাসি। তোমরা পাঁচজনে মিলিয়া ভূতের গল্প কর,সেখানে আমি পাঁচ ঘন্টা বসিয়া থাকিতে পারি।’ শুধু
কথাঃ আবোলতাবোল এইসব ঠকদের কাছে ঠকেও সুখ ‘কত করে নিল মাছটা?’ -‘তিনশো।’ – -‘ব্যাপক ঠকিয়েছে। বাজার ঘুরে দ্যাখো গে, এ মাছ হয়ত দুশোটাকা কেজিতে সেধে
কথা বকুলকথা বসন্ত বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-‘নব শ্যামল শোভন রথে,এসো বকুল বিছানো পথে।’ ঋতুরাজ বসন্তের যথার্থ আবাহনই বটে! কেননা শিউলি না এলে যেমন শরতের চলে না,তেমনি
অণুগল্প অন্ধকার খেজুরগাছের নিচে কীসের একটা আওয়াজ হল। খড়মড়। চারদিকে জমাট অন্ধকার। কৃষ্ণপক্ষ চলছে। স্বদেশ টর্চটা জ্বালাল। দেখতে পেল না কিছুই। তবু সাবধান হল। সিতুদের বাড়ির পুরো রাস্তা টর্চটা জ্বালিয়েই রাখল। -মামিমা! সিতুদের
প্রিয় লেখক পাঁচনম্বর বাড়ির সেই গুণী মানুষটি পাঁচনম্বর বাড়ির উত্তরের বারান্দায় ঠায় বসে আছেন তিনি। দৃষ্টি ছ’নম্বর বাড়ির দিকে নিবদ্ধ। পাঁচনম্বর আর ছ’নম্বর বাড়ির
প্রিয় লেখক কিরীটী ও নীহাররঞ্জন ‘প্রীতিভোজ উৎসব সুব্রতর বাড়িতে। আমহার্স্ট স্ট্রিটে প্রকান্ড বাড়ি কিনেছে সুব্রতরা। সে বাড়িতেই গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে এই প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান। অনেক আমন্ত্রিতরাই
প্রিয় লেখক কবি ও সমালোচক মোহিতলাল হার্টের ্ যন্ত্রণা। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। কিন্তু দৃঢ়চেতা মানুষটি যন্ত্রণা নিয়েও অবিচল। চোখেমুখে নেই কোনও ভয়ের চিহ্ন।
প্রিয় লেখকঃ প্রকাশক সজনীকান্ত প্রিয় লেখক প্রকাশক সজনীকান্ত স্ত্রী আসন্নপ্রসবা। তিনি নিশ্চিত, সংসারে যুক্ত হতে চলেছে যে নতুন অতিথি,সে হবে পুত্র। অনাগত সন্তানকে পুত্র ধরে নামও ঠিক করে ফেললেন তার। রঞ্জন। এসব এত তাড়াতাড়ি করার কারণ আছে। নীরদচন্দ্রকে তিনি কথা দিয়েছেন, বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’র তিনিই হবেন প্রকাশক। কিন্তু প্রকাশক হলেই তো হল না। একটা প্রকাশালয় তো দরকার। দরকার তার একটা জুৎসই নামও। কী নাম দেবেন? যে আসছে,তার নামটা ছাড়া! প্রকাশালয়ের নাম দিলেন-রঞ্জন প্রকাশালয়। নীরদচন্দ্র সজনীকান্তের মুখে কথাটা শুনে প্রথটায় কিন্তু একটু অবাকই হয়ে গিয়েছিলেন। বই প্রকাশ করা সহজ কাজ নয়। অনেক টাকাকড়ির ব্যাপার। সজনীকান্তের মাস মাইনে তখন দেড়শো। ভাড়া বাড়িতে নতুন সংসার। অন্য কোনও জায়গা থেকে হঠাৎ টাকা এসে হাজির হবে তাও নয়। কিন্তু তিনি সজনীকান্ত। প্রবল আত্মবিশ্বাস তাঁর চরিত্রে। তাই অবাক হয়েও নীরদচন্দ্র তাঁর কথায় ভরসা রাখলেন। ছুটলেন তাঁদের মির্জাপুর স্ট্রিটের মেসে, বিভূতিভূষণকে আনতে। এ দিনের ঘটনার আগে
প্রিয় লেখকঃ সব্যসাচী লেখক বুদ্ধদেব বসু প্রিয় লেখক সব্যসাচী লেখক বুদ্ধদেব বসু একটা নতুন ছেলে এসেছে স্কুলে। লাজুক। বেশি কথা বলে না। কেবল টিফিনের সময়
কথাঃআবোলতাবোল বাঁকা কঞ্চি সময়টা যদি হয় সকাল দুপুরের মাঝামাঝি আর কালটা যদি হয় গ্রীষ্ম তবে গ্রামের পথে বে্রোনো ছোট ছেলেটার হাতে একটা বাঁকা কঞ্চি থাকা মানেই
কথাঃআবোলতাবোল চেয়ার -‘প্লাস্টিকের চেয়ার নেবে?’ পুরোনো কাগজ ওজন করতে করতে অল্প বয়সী ছেলেটা আমার প্রশ্ন শুনে ঘাড় ঘোরায়।-‘ভাঙা?’ -‘একেবারে ভাঙা নয়। এখনও বসা যায়।’ -‘দাম কিন্তু ভাঙারই পাবেন।-কটা আছে?’ -‘কটা আবার? একটা।’ কাগজ ওজন প্রায় শেষ। চেয়ার নেবার জন্য ঘরে ঢুকি। কিন্তু বাধা আসে ভিতর থেকে–‘নতুন না কিনে ওটা দিয়ে দিচ্ছ যে! এই সময়ে চেয়ার কিনতে নিশ্চয় বাইরে যাবে না!’ এখন বাধা। অথচ চেয়ার বিক্রির তাড়া কিন্তু তার জন্যই। কদিন আগে চেয়ারের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে শাড়ি ছিঁড়ে গিয়েছে ভাঙা জায়গায় আটকে। তবে এই পরিস্থিতিতে কথাটায় যুক্তি আছে। কাগজ কেনার ছেলেটাকে কাগজের দাম বুঝে নিয়ে বিদায় করি। আমার বসার চেয়ারটা ভেঙেছে কিন্তু আজকে নয়। আর তাতে যে আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে তাও নয়। হেলান দেওয়ার অংশটায় দুপাশের দুটো জায়গা বসার অংশটা থেকে ছেড়ে গেছে। এতে বরং আমার আরামই হচ্ছে। প্লাস্টিক চেয়ারে বসে রিভলভিং চেয়ারের মজা পাচ্ছি। ভাঙা চেয়ারে দোল খেতে দেখলে বাড়ির আর একজনের চোখ অবশ্য কপালে ওঠে। -‘এভাবে দোল খেলে,একদিন কিন্তু পড়বে হুড়মুড় করে!’ কথাটা হয়ত মিথ্যে নয়। কিন্তু কম্পিউটারের সামনে বসে যখন কিছুই লেখার খুঁজে পাই না,তখন এপাশে ওপাশে দোল খেলে দেখেছি চিন্তাতেও দোলা লাগে। মনেই আসে না,এভাবে দোল খেলে পড়েও যেতে পারি। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, তখন কিন্তু চেয়ারটা অনেকবারই পাল্টানোর কথা হয়েছে। আর আমি একেবারে গা করিনি তাও নয়। তবে এ ব্যাপারে আমার তো একেবারে বেহিসেবি
কথাঃ আবোলতাবোল বাংলা প্রবাদের পুনর্লিখন প্রস্তাব স্টিফেন লিককের একটা ইংরেজি প্রবন্ধ পড়েছিলাম।’ওল্ড প্রোভার্বস মেড নিউ’। প্রবন্ধটিতে বেশ কয়েকটা ইংরেজি প্রবাদ নিয়ে লেখক আলোচনা করে দেখিয়েছিলেন
গল্পঃ সাহিত্য/সাহিত্যিক অভিনব পাওনাদার সেদিন কলেজস্ট্রিটে এক অভিনব পাওনাদারকে দেখা গেল। সাধারণত পাওনাদারের ভয়ে ঋণী ব্যক্তিকে গা ঢাকা দিতে দেখা যায়। কলেজস্ট্রিটে সেদিন উল্টো দৃশ্য। ঋণী ব্যক্তিকে দেখে পাওনাদারই ছাতা দিয়ে নিজের মুখ আড়াল করার চেষ্টা করছেন। পাওনা টাকার পরিমাণও কম নয়। গত শতকের তিনের দশকের শেষ দিক সেটা। পাওনা টাকা পাঁচশোর মূল্য তাই অনেকটাই। পাওনাদার ব্যক্তিটি আর কেউ নন। বিভূতিভূষণ। ঋণী ব্যক্তিটিও উচ্চশিক্ষিত,আদর্শবাদী,বিলাতফেরত। নাম অশোক গুপ্ত। বিকলাঙ্গ,অপরিণতবুদ্ধি শিশুদের নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল অশোক গুপ্ত ও তাঁর স্ত্রীর। এজন্য দরকার গ্রাম্য নির্জন একটা পরিবেশ। পছন্দ হয়েছিল ঘাটশিলার এক জনহীন স্থান। তৈরি করেছিলেন ছোট্ট একটা বাড়ি। অশোক গুপ্তের সঙ্গে বিভূতিভূষণের পরিচয় ওই সময়েই। বিভূতিভূষণ তাঁদের সাধনার কথা শুনে শুধু তাঁদের উৎসাহই দেননি। আর্থিক দুরবস্থা তখন লেখার দৌলতে অনেকটাই তাঁর ঘুচেছে। অশোক গুপ্তকে তাঁদের আর্থিক অসুবিধার জন্য পাঁচশো টাকা ধারও দিয়েছিলেন। এই ধার গুপ্তসাহেবের মনে না থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনি নানাভাবে জড়িয়ে পড়লেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানও একসময় নিঃশেষ হয়ে গেল। স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়ল তাঁর। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বিভূতিভূষণ গুপ্তসাহেবের খোঁজ নিতে পারলেন না। পাছে গুপ্তসাহেব ভাবেন,টাকার জন্যই এই খোঁজ। এরপরের ঘটনা ওই কলেজ স্ট্রিটের। কিন্তু ছাতা দিয়ে মুখ আড়াল করার আগেই সেদিন অশোক গুপ্ত দেখে ফেলেছিলেন বিভূতিভূষণকে। -‘বিভূতি না!’ বলেই এগিয়ে এসে বিভূতিভূষণের হাতটা ধরে ফেললেন তিনি। বললেন-‘আমার একটা উপকার করতে হবে। না বললে হবে না। বল করবে!’ মানুষটির উপর বিভূতিভূষণের প্রগাঢ় শ্রদ্ধা। বললেন-‘নিশ্চয় করব। বলুন দাদা।’ -‘আমাকে ঋণমুক্ত করতে হবে। তোমার পাওনা টাকার বিনিময়ে ঘাটশিলার ওই বাড়ি নিয়ে।’ বিভূতিভূষণ প্রচন্ড আপত্তি জানালেন।-‘তা কেমন করে হবে? একখানা বাড়ির দাম পাঁচশো টাকার অনেক বেশি!’ অশোক গুপ্ত নাছোড়। বিভূতিভূষণ বললেন,-‘বেশ। কিন্তু পাঁচশোতে নয়। আর কত টাকা আপনাকে দিতে হবে বলুন।’ গুপ্তসাহেব বললেন, -‘না, আর কিছুই তোমাকে দিতে হবে না।’ এরপরে গুপ্তসাহেব রেজিস্ট্রি করে বাড়িটা দিয়ে দিলেন বিভূতিভূষণকে।
গরুর গাড়ির ক’টি চাকা আলাপনের বিয়েতে বরযাত্রী যাচ্ছি। পিচঢালা মসৃন রাস্তা। চারচাকা এসিতে আলাপন। পাশে আমরা ক’জন।-‘আমার বিয়েতে সবাই গিয়েছিলাম বাসে।’ কিছুটা যেতেই বললেন এক
কথাঃআবোলতাবোল কাঁঠাল এবার বাড়ির বাগানে লিচু ধরেছিল অপর্যাপ্ত। এখন শুনছি আমও নাকি অঢেল। কিন্তু কাঁঠাল? এটা তো কাঁঠালেরও কাল। কাঁঠালের কথা তো বাড়ির কারও ফোনে শুনছি না। কাঁঠাল নিয়ে আমার আগ্রহ কম। তাই কাঁঠালের কথাটা আমিও বারে বারেই শুধোতে ভুলে যাচ্ছি। কাঁঠাল কি তবে হয়নি,নাকি যা হয়েছে এঁচোড় অবস্থাতেই শেষ! আরও একটা কথা অবশ্য মনে হচ্ছে। আমার যেমন আগ্রহ নেই বলে শুধোতে ভুলে যাচ্ছি,ওদের দিক দিয়েও ব্যাপারটা সেরকম নয় তো! মনে মনে গুনি। হ্যাঁ,এদিক সেদিক মিলিয়ে তো কম নয়। সাত সাতটা কাঁঠাল গাছ। কোনওটাতে খাজা,কোনওটাতে রসখাজা,কোনওটাতে গোলা,কোনওটাতে রুদ্রাক্ষী। হরেক কিসিম। রুদ্রাক্ষী কাঁঠালগাছটা বাবার খুব প্রিয় ছিল। এ গাছের কাঁঠাল বাবা একাই একখানা খেতেন। আসলে খুব বড় সাইজ তো নয়। কিন্তু কী মিষ্টি! এ কাঁঠাল শেয়ালদের খুব প্রিয় বলে এর অন্য নাম শেয়াল-খাগি। আমারা অবশ্য রুদ্রাক্ষী,শেয়াল-খাগি কোনওটাই কোনওদিন বলিনি। আমারা এর মধুর স্বাদের জন্য একে বরাবর ডেকে এসেছি ‘মধু-কাঁঠাল’ নামে। এককালে গাছে কাঁঠাল পাকলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। আর এখন? পাকা কাঁঠাল খাওয়াই হয় না। আম কাঁঠালের সময় বাড়ি গেলেও,আমই খাই। কাঁঠাল খাবার কথা মনেই হয় না। কাঁঠালের এখন যা কিছু খাতির তা এঁচোড় অবস্থাতেই। এ ঘটনা যে শুধু আমার বেলাতেই তা কিন্তু নয়। পাকা কাঁঠাল-ভালবাসা লোক সব জায়গাতেই এখন কম। কেউ কেউ তো আবার এর গন্ধটাও সহ্য করতে পারেন না। অথচ কাঁঠালের কিন্তু এককালে আমের মতই আদর ছিল। ঘুমপাড়ানী মাসিপিসির গানে কাঁঠালকে আমের সমান গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমাকাঁঠালের বাগান দেব/ছাঁওয়ায় ছাঁওয়ায় যেতে,/উড়কি ধানের মুড়কি দেব/পথে জল খেতে।’ পশ্চিমা রামায়ণে হনুমানের কাঁঠাল ভক্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে পন্স অর্থাৎ কাঁঠালকে অমৃতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। শোনা যায় স্বয়ং মহাপ্রভু এই ফলটি বড় ভালবাসতেন। এ কালের রথী মহারথীরা কেউই কাঁঠাল-রসে নিজেদের বঞ্চিত রাখেননি। দীনবন্ধু মিত্র কাঁঠালে এত মজেছিলেন যে কাঁঠাল কোষকে ভালবাসার সঙ্গে এক করে দেখেছেন। ‘পল্লীচিত্রে’র চিত্রকর দীনেন্দ্রকুমার রায় তো আম লিচু নয়,শুধু কাঁঠালেরই ভক্ত ছিলেন। পরশুরামের কেদার চাটুজ্যে যেভাবে কাঁঠাল-কীর্তন করেছেন,তাতে বোঝা যায় ফলটি রাজশেখর বসুরও কম প্রিয় ছিল না। রাজশেখর বসুর দাদা শশিশেখর বসু তো ‘খাজা কাঁঠাল’ শিরোনামে আস্ত একটা রম্যরচনাই লিখে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ আম ভালবাসতেন, ভালবাসতেন এঁচোড়ের নানা পদ। কিন্তু কাঁঠালের সেভাবে গুণগ্রাহী না হলেও একেবারে অনাদর করতেন না ফলটিকে। শিলাইদহ থেকে জোড়াসাঁকোয় তিনি একবার কাঁঠাল পাঠিয়েছিলেন। ১২৯৮ বঙ্গাব্দে অভিজ্ঞা দেবীর কবিপত্নীকে লেখা এক চিঠিতে এরকমই এক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। ওদিকে ‘রূপসী বাংলা’র কবির তো সাধই ছিল,’কুয়াশার বুকে ভেসে আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’ মনে আছে,ছেলেবেলায় কাঁঠাল পাকলে তার খুশবুতে আমরা যেমন লাফিয়ে উঠতাম,তেমনই সাড়া পড়ে যেত পশুপাখিদের মধ্যেও। ভোঁদর,হোঁদর,হুড়ার,শেয়াল,হনুমান একে একে সকলেই হাজির হত মঞ্চে। আর এদের হাত থেকে পড়ে যাওয়া,ঝুলে থাকা পাকা-আধপাকা কাঁঠাল বাঁচাতে আমাদের কত কসরৎই না করতে হত। এখনও নিশ্চয় এইসব প্রাণীদের মধ্যে একই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কাঁঠাল নিয়ে উৎসাহ নিভেছে,তাই খোঁজও রাখি না,কীভাবে এখন এদের তাড়ানো হয়।
সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আমি যত্ন করিয়া লিখি,লেখাকে চিত্তাকর্ষক করিবার চেষ্টা করি। তাই প্রথম পাঠে বোধহয় লেখার চাকচিক্যই চোখে পড়ে। চাকচিক্য ছাড়া তাহাতে যে আর কিছু আছে তাহা কেহ লক্ষ্য করেন না। অনেকে পরে আবার লেখাটি পড়িলে তাহার অন্তর্নিহিত বস্তুটি চোখে পড়ে।‘ নিজের লেখা সম্পর্কে ডায়েরিতে একথা লিখেছিলেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তারিখ ৪ঠা জানুয়ারি,১৯৫২। ওই একই লেখায় তিনি জানিয়েছিলেন,তাঁর লেখা পাঠকদের আকৃষ্ট করার কারণ,তাতে রয়েছে একটা immediate appeal যা মোহিতলালের ভাষায় ‘ত্বরিতানন্দ’। আসলে একজন লেখক টিকে থাকেন লেখার মধ্যে দিয়ে নিজের বিশ্বাস,আদর্শকে সঠিক ও সুন্দরভাবে প্রতিফলিত করার মাধ্যমে। একেই হয়ত শরদিন্দু বলতে চেয়েছেন লেখার ‘অন্তর্নিহিত বস্তু’। এই ‘অন্তর্নিহিত বস্তু’ গোয়েন্দা কাহিনি বা ভৌতিক কাহিনিতে সেভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না। এরজন্য দরকার পড়ে অন্যধরণের লেখা। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এই অন্য ধরণের লেখা হল ইতিহাসের কাহিনি। এর মধ্যেই তিনি তাঁর জীবনচেতনা পরিস্ফুট করার চেষ্টা করেছেন। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখালেখি শুরু হয়েছিল ১৯২৯ সালে। আর তাঁর জন্ম সেই বাংলাসাহিত্যের জন্য খুব পয়মন্ত সাল ১৮৯৯ এ। ১৮৯৯ সালটি পয়মন্ত কেননা এই সাল ধারণ করে আছে শরদিন্দুর সঙ্গে জীবনানন্দ ও নজরুলের জন্মতারিখ। শরদিন্দু জন্মেছিলেন ৩০ মার্চ,উত্তর প্রদেশের জৌনপুর শহরে। বাবা তারাভূষন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মুঙ্গেরের ডাকসাইটে উকিল। ম্যাট্রিক পাশ করেই শরদিন্দু চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতায় কেটেছে ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল অব্দি। বিএ পাশ করেন কলকাতা থেকে, ল তেও ভর্তি হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইন পাশ করেন পাটনা থেকে। কবিতা দিয়ে সাহিত্যের যাত্রাপথ শুরু। একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশ করেন-‘যৌবন স্মৃতি’। পাকাপাকিভাবে লেখায় আসেন ১৯২৯ সালে। ছোটবেলা থেকেই ডিটেকটিভ গল্পের পোকা ছিলেন। দেশি বিদেশি গোয়েন্দা কাহিনি গিলতেন গোগ্রাসে। কলকাতায় পড়াকালীন শহুরে মানুষজনকে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করছেন। লিখতে এসে ভাবলেন,গোয়েন্দা কাহিনি লিখলে কেমন হয়। লিখতে পারবেন,এ বিশ্বাস ছিল। ১৯৩৩ এ শুরু করলেন প্রথম গল্প ‘পথের কাঁটা’ দিয়ে। ‘পথের কাঁটা’ সহ প্রথম তিনটি গল্প ছাপা হল ‘মাসিক বসুমতী’তে। বাংলা সাহিত্যের পাঠক সাদরে গ্রহণ করল গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীকে। নিজে বন্দ্যোপাধ্যায়,কিন্তু গোয়েন্দা বক্সী,এ নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মজা করে বলেছিলেন-‘আমার ধারণা কায়স্থরা ব্রাহ্মণদের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি ধরে।’ শরদিন্দুর গোয়েন্দা কাহিনি তাঁর লেখার প্রসাদগুণে নিছক গোয়েন্দা-কাহিনি হয়ে থাকল না। হয়ে উঠল সামাজিক উপন্যাস। কিন্তু তবু,শুধু গোয়েন্দা কাহিনি নিয়ে শরদিন্দুর মত শক্তিশালী লেখক এগিয়ে যাবেন,তা হতে পারে না। গোয়েন্দা কাহিনির পাশে ছোটবেলা থেকেই শরদিন্দুর প্রিয় ছিল ঐতিহাসিক কাহিনি। রমেশচন্দ্র দত্তের ‘রাজপুত জীবন সন্ধ্যা’, ‘মহারাষ্ট্র জীবন প্রভাত’ পড়েছিলেন মুগ্ধ হয়ে। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র পড়ে অভিভূত হয়ে গেলেন। গোয়েন্দা কাহিনির পাশাপাশি এবারে চলল পুরোদমে ঐতিহাসিক উপন্যাস,গল্প লেখা। শরদিন্দুশরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন-‘ইতিহাসের গল্প লিখেই বেশি তৃপ্তি পেয়েছি। মনে কেমন একটা সেন্স অব ফুলফিমেন্ট হয়।’ কিন্তু কেমন হল তাঁর ঐতিহাসিক উপন্যাস? সুকুমার সেন লিখেছেন-‘আগেকার লেখকদের মতো শরদিন্দুবাবু দূরবীনের চোঙার মধ্য দিয়ে কিম্বা নাকে দূরদৃষ্টির চশমা এঁটে ইতিহাস হাতড়াননি বা খোঁজ চালাননি। ইনি যেন চোখে কন্ট্যাকট লেন্স লাগিয়ে ইতিহাসকে হাতের নাগালে পেয়েছিলেন। …দূরের দৃশ্যপটকে নিকটে এনে দূরের মানুষকে কাছের করতে পেরেছেন
কথাঃ আবোলতাবোল বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে,ধরতে একটু বাধো বাধো ঠেকেই। তবু না ধরেও পারা যায় না। কারণ অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে শুধু বিরক্তিকর অভিজ্ঞতাই হয় না,অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবরও মাঝেসাঝে মিলে যায়। লকডাউনের বাজারে সেদিন সন্ধেয় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল। ইতস্তত করে ধরে যেই বলেছি ‘হ্যালো’,অমনি একটা জড়ানো কাঁপা-কাঁপা পুরুষ গলার আবৃত্তি-‘জীবন গিয়াছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার…’।‘রং নাম্বার’ বলে কাটতে যাব ফোনটা,এমন সময় ওই জড়ানো কন্ঠ বলে ওঠে-‘চিনতে পারলি না!আমি দীপ্তেন্দু,-নবীন। ফেসবুক থেকে ফোননম্বর যোগাড় করে ফোন করছি।’ মুহূর্তেই হু হু করে ছুটে চলে এল বাল্যকাল ;‘হরিহর আত্মা’ দুই কিশোরের বন্ধুত্ব। খুলে গেল হৃদয়ের উদারা-মুদারা। কে যেন বলেছিল, বন্ধুত্বের চেয়ে বড় প্রেম আর নেই। মনে হল কথাটা মিথ্যে নয়। যাঁরা একেলা জগৎ ভুলে পড়ে থাকেন আপন সংসার-কূলে,তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু গড়পড়তা বেশিরভাগ
সিক্সে এসে আবৃত্ত দশমিক কষাই;মনে হয়,শুধু সংখ্যা নয়,এই বিদ্যামঠতল,দিনের পরে দিন যে গেল সব;এমনকী প্রেম তাও-এক নিরন্তর পৌন:পুনিক। তাই তো আলো জ্বলে বার বার;অক্ষর শিল্প হয়ে
ঠিকানা তুমি যদি ব্রড কোশ্চেন হওআমি এমসিকিউতুমি লিখে চলো পাতার পর পাতাআমি দিয়ে চলি ক্রশ অথবা টিকতুমি যখন কেশব নাগ খুলে চৌবাচ্চার নল সামলাওআমি তখন
Recent Comments